আমি এখানে তিনটি ধারায় বুঝিয়ে দিয়েছি । যেখানে রয়েছে আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতা, আমার নিজের সার্টিফিকেট সংশোধন করতে হয়েছিল। মায়ের নাম পুরোটাই ভুল বাবার নামে সামান্য ভুল আর আমার নামে সামান্য ভুল ছিল। আর্টিকেলে একদম সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিয়েছি কিভাবে এই কাজটি করবেন।
সার্টিফিকেট সংশোধনের জন্য অনলাইন আবেদন: ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা
একসময় অফলাইনে সার্টিফিকেট সংশোধনের আবেদন করা বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু এখন সময় পাল্টে গেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের ছোঁয়া সর্বত্র লেগেছে, এবং এখন জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি ও সমমানের সার্টিফিকেট সংশোধনের আবেদনও অনলাইনে করা যায়। ঢাকা পোস্ট-এর পাঠকদের মধ্যে অনেকে এ বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। চলুন, এর পদ্ধতি জেনে নিই।

অনলাইন আবেদনের প্রক্রিয়া
সার্টিফিকেট সংশোধনের জন্য প্রথমে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। প্রতিটি বোর্ডের ওয়েবসাইটে “Online Application” নামে একটি লিঙ্ক থাকবে। এই লিঙ্কে গিয়ে সার্টিফিকেট সংশোধনের আবেদন করা যায়। যদিও প্রত্যেক বোর্ডের ইন্টারফেস ভিন্ন হতে পারে, সব বোর্ডেই এই সুবিধা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, আমরা যশোর শিক্ষা বোর্ডের পদ্ধতি দেখাব।
যশোর শিক্ষা বোর্ডে আবেদন
যশোর শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে বাম পাশে উপরের অংশে “Name & Age Correction” অপশনে ক্লিক করুন। এটি ক্লিক করলে আবেদনের জন্য একটি নতুন পেজ খুলবে। এখানে নিম্নলিখিত তথ্য দিতে হবে:
- পরীক্ষার ধরন (জেএসসি/এসএসসি/এইচএসসি)
- পাসের সাল
- রোল নম্বর
- রেজিস্ট্রেশন নম্বর
- কেন্দ্রের নাম ও কোড নম্বর
সঠিক তথ্য দিয়ে “Find” বোতামে ক্লিক করলে সনদ অনুযায়ী আপনার তথ্য প্রদর্শিত হবে। এরপর মোবাইল নম্বর, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা যোগ করতে হবে।
সংশোধনের ধরন নির্ধারণ
নিচের অংশে আপনি যে সংশোধন চান, তার তথ্য জানতে হবে। প্রার্থিত তথ্যের জন্য টিক চিহ্ন দিলে সংশ্লিষ্ট ফিল্ড খুলবে। উদাহরণস্বরূপ:
- নাম সংশোধনের জন্য “Name Correction” নির্বাচন করুন।
- জন্মতারিখ সংশোধনের জন্য “Date of Birth Correction” নির্বাচন করুন।
পরীক্ষার তথ্য ও কারণ উল্লেখ
নিচে সংশোধন করতে চাওয়া পরীক্ষার তথ্য (জেএসসি/এসএসসি/এইচএসসি, পাসের সাল, রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, কেন্দ্রের নাম ও কোড) দিতে হবে। এরপর একটি বক্সে সংশোধনের কারণ ব্যক্ত করতে হবে।
কাগজপত্র আপলোড
পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের স্ক্যান কপি আপলোড করতে হবে। সাইটে নিম্নলিখিত অপশন থাকবে:
- জন্ম সনদ
- প্রাইমারি স্কুল পাস সনদ (যেখানে প্রযোজ্য)
- প্রতিষ্ঠান প্রধানের প্রত্যয়নপত্র
- জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্ম সনদ
- অ্যাফিডেভিট (যেখানে প্রযোজ্য)
- অন্যান্য (মেডিকেল সনদ, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান/ওয়ার্ড কাউন্সিলরের প্রত্যয়নপত্র)
প্রতিটি অপশনে “Browse” করে সংশ্লিষ্ট ফাইল আপলোড করুন। এরপর “Submit” বোতামে ক্লিক করুন।
আবেদন পরিচালনা
ওয়েব পেজের উপরে “পাসওয়ার্ড পরিবর্তন”, “আবেদন সম্পাদনা”, “আবেদনের সর্বশেষ তথ্য” ও “নির্দেশিকা” অপশন থাকবে। এখান থেকে:
- পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করতে পারবেন।
- আবেদনে সংযোজন-বিযোজন করতে পারবেন।
- অনলাইন স্ট্যাটাস চেক করতে পারবেন।
- নির্দেশিকা থেকে আবেদন পদ্ধতি জানতে পারবেন।
ফি জমা ও পরবর্তী পদক্ষেপ
আবেদন জমা দেওয়ার পর সোনালী সেবার PDF ফাইল প্রিন্ট করে সরকারি ফি ব্যাংকে জমা দিন। এরপর এসএমএসে সভার তারিখ পাবেন। সেই তারিখে উপস্থিত হতে হবে। লগ-ইন করে স্ট্যাটাস চেক করা যায়। অনুমোদন পেলে ফাইল প্রিন্ট করে প্রত্যেক দপ্তরে একটি করে কপি জমা দিন।
সময় ও প্রক্রিয়া
- নামে সামান্য পরিবর্তনে কাজ দ্রুত হয়।
- জন্মতারিখ বা বড় পরিবর্তনে সময় বেশি লাগে। সভা ডাকা হয় এবং সিভিল সার্জনের প্রত্যয়নপত্র/মেডিকেল সনদ/অভিভাবকের এনআইডি প্রয়োজন হতে পারে।
- সামান্য পরিবর্তনে ৩-৪ মাস, বড় পরিবর্তনে ১ বছরের বেশি সময় লাগতে পারে।

এফিডেভিট ও পত্রিকা বিজ্ঞপ্তি
- এফিডেভিট: নাম বা জন্মতারিখ সংশোধনের জন্য আইনজীবীর মাধ্যমে প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট বা নোটারি পাবলিকের কাছে হলফনামা করতে হবে। ১৮ বছরের বেশি বয়সে নিজে করতে পারবেন। কম বয়সে বা অভিভাবকের নাম সংশোধনে বাবা/মায়ের হলফনামা প্রয়োজন। তথ্য (নাম, বাবা-মায়ের নাম, জন্মতারিখ, পরীক্ষা বিস্তারিত) সঠিকভাবে উল্লেখ করুন।
- পত্রিকা বিজ্ঞপ্তি: এফিডেভিটের পর একটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করুন। এফিডেভিটের তথ্য ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর উল্লেখ করুন।
এই পদ্ধতি অনুসরণ করে আপনি সহজে সার্টিফিকেট সংশোধন করতে পারবেন।
দ্বিতীয় ধারা
প্রথমে উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে সার্টিফিকেট সংশোধনের বিষয়ে জেনে নিন। নামে যদি বেশি বা কম অক্ষর থাকে, তাহলে প্রথমে একটি অ্যাফিডেভিট করতে হবে। এরপর সেটি পত্রিকায় লিপিবদ্ধ করতে হবে। তারপর একটি আবেদনপত্র তৈরি করতে হবে। আবেদনপত্রে আপনার যোগাযোগ নম্বর দিতে হবে। নম্বরে ফোন করে আপনাকে মিটিংয়ের জন্য ডাকবে। যার নামের সমস্যা, তাকে মিটিংয়ে হাজির হতে হবে। মিটিংয়ে গিয়ে সব ফাইল জমা দিতে হবে। এই কাজগুলো বাংলাদেশ শিক্ষা বোর্ডে গিয়ে করতে পারবেন। সেখানে কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করুন। কোনো সমস্যা হলে নিচে কমেন্ট করুন।
- প্রধান শিক্ষকের সাথে পরামর্শ:
- প্রথমে আপনার উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে বিষয়টি নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করুন।
- অ্যাফিডেভিট ও লিপিবদ্ধকরণ:
- নামে ভুল থাকলে প্রথমে একটি অ্যাফিডেভিট তৈরি করতে হবে। এরপর এটি একটি পত্রিকায় লিপিবদ্ধকরণ (পাবলিশ) করুন। আবেদনপত্র প্রস্তুতি:
- লিপিবদ্ধকরণের পর একটি আবেদনপত্র তৈরি করুন। আবেদনপত্রে আপনার যোগাযোগ নম্বর উল্লেখ করতে হবে। মিটিংয়ের জন্য কল:
- আবেদন জমা দেওয়ার পর আপনাকে ফোনের মাধ্যমে মিটিংয়ে যোগ দেওয়ার জন্য ডাকা হবে।
- মিটিংয়ে হাজিরা ও ফাইল জমা:
- নামের সমস্যা থাকলে মিটিংয়ে উপস্থিত হতে হবে। সেখানে প্রয়োজনীয় ফাইলগুলো (অ্যাফিডেভিট, পত্রিকার কাটিং, এবং অন্যান্য কাগজপত্র) জমা দিতে হবে।
- বাংলাদেশ শিক্ষা বোর্ডে প্রক্রিয়া সম্পন্ন:
- এই কাজগুলো বাংলাদেশ শিক্ষা বোর্ডের অফিসে গিয়ে করা যেতে পারে। সেখানে কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করুন।
তৃতীয় ধারা
সার্টিফিকেট সংশোধন করার নিয়ম: ধাপে ধাপে গাইড ২০২৫
শিক্ষা বোর্ড থেকে সার্টিফিকেট সংশোধনের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া জানুন
কেন সার্টিফিকেট সংশোধন প্রয়োজন?
সার্টিফিকেটে ভুল তথ্য থাকলে তা উচ্চ শিক্ষা, চাকরি, বা বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। **সার্টিফিকেট সংশোধন** করা তাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, নাম, জন্ম তারিখ, বা বানান ভুল থাকতে পারে।
সার্টিফিকেট সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
কাগজপত্র | বিস্তারিত |
---|---|
এসএসসি/এইচএসসি সার্টিফিকেট কপি | মূল সার্টিফিকেটের ফটোকপি সংযুক্ত করতে হবে। |
জন্ম সনদ | জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য প্রয়োজন। |
জাতীয় পরিচয়পত্র | নাম সংশোধনের জন্য প্রয়োজন। |
প্রমাণপত্র | স্কুলের প্রশংসাপত্র বা অন্যান্য প্রমাণ। |
সার্টিফিকেট সংশোধনের ধাপসমূহ
- আবেদন ফরম সংগ্রহ: শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট থেকে আবেদন ফরম ডাউনলোড করুন।
- তথ্য পূরণ: ফরমে সঠিক তথ্য লিখুন এবং সংশোধনের বিস্তারিত উল্লেখ করুন।
- কাগজপত্র সংযুক্ত: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করুন।
- ফি জমা: নির্ধারিত ফি ব্যাংক চালানের মাধ্যমে জমা দিন।
- আবেদন জমা: শিক্ষা বোর্ডের অফিসে আবেদন জমা দিন।
সার্টিফিকেট সংশোধনের ফি
শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে ফি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়। সাধারণত এসএসসি/এইচএসসি সার্টিফিকেট সংশোধনের জন্য ৫০০-১০০০ টাকা ফি লাগতে পারে।
প্রায়শই জি�অনেক সময় শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেটে ভুল থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে কী করা উচিত?
প্রশ্ন: সার্টিফিকেট সংশোধন করতে কী কী কাগজপত্র লাগবে?
উত্তর: সার্টিফিকেট সংশোধনের জন্য আপনার এসএসসি/এইচএসসি সার্টিফিকেটের কপি, জন্ম সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র, এবং সংশোধনের প্রমাণপত্র (যেমন স্কুলের প্রশংসাপত্র) লাগবে।
প্রশ্ন: সার্টিফিকেট সংশোধনের জন্য কত সময় লাগে?
উত্তর: সাধারণত ১৫-৩০ দিন সময় লাগতে পারে। তবে জরুরি সেবার জন্য অতিরিক্ত ফি দিয়ে সময় কমানো যায়।