মাদ্রাসার সার্টিফিকেটে মায়ের নাম সংশোধনের নিয়ম

দাখিল ও আলিম সার্টিফিকেটে মায়ের নাম সংশোধনের জন্য ধাপে ধাপে অনলাইন প্রক্রিয়া জানুন। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, এফিডেভিট, পত্রিকার বিজ্ঞপ্তি, এবং ফি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।

মাদ্রাসার সার্টিফিকেটে মায়ের নাম সংশোধনের নিয়ম

ভূমিকা (Introduction)

মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দাখিল, আলিম, বা অন্যান্য সার্টিফিকেটে মায়ের নামে ভুল থাকলে তা সংশোধন করা অত্যন্ত জরুরি, কারণ এই সনদ শিক্ষা ও পেশাগত জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সার্টিফিকেট সংশোধনের একটি সহজ ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া চালু করেছে। এই নিবন্ধে দাখিল বা আলিম সার্টিফিকেটে মায়ের নাম সংশোধনের ধাপে ধাপে প্রক্রিয়া, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হলো। সঠিক নির্দেশনা অনুসরণ করলে এই প্রক্রিয়া দ্রুত ও কার্যকরভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব।

সংশোধন প্রক্রিয়ার ধাপসমূহ (Six Bullet Points)

মায়ের নাম সংশোধনের জন্য নিম্নলিখিত ছয়টি ধাপ অনুসরণ করতে হবে:

  • মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রবেশ: বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট (http://bmeb.gov.bd/) বা পোর্টালে (http://bmeb.portal.gov.bd/) গিয়ে “Online Services” বা “Certificate Correction” লিংক নির্বাচন করুন। এটি আবেদন ফর্মের পেজে নিয়ে যাবে।
  • আবেদন ফর্ম পূরণ: ফর্মে পরীক্ষার ধরন (দাখিল/আলিম), পাসের সন, রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, মাদ্রাসার নাম ও কোড, এবং ব্যক্তিগত তথ্য (মোবাইল নম্বর, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা) সঠিকভাবে পূরণ করুন।
  • সংশোধনের ধরন নির্বাচন: ফর্মে “Mother’s Name Correction” অপশন টিক দিয়ে সংশোধনের কারণ (যেমন, বানান ভুল, নামের অসঙ্গতি) বিস্তারিতভাবে লিখুন।
  • কাগজপত্র আপলোড: মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্র, আবেদনকারীর জন্ম সনদ, মাদ্রাসা প্রধানের প্রত্যয়নপত্র, এফিডেভিট, এবং পত্রিকার বিজ্ঞপ্তির স্ক্যান কপি আপলোড করুন।
  • এফিডেভিট ও পত্রিকার বিজ্ঞপ্তি: প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট বা নোটারি পাবলিকের কাছে এফিডেভিট সম্পাদন করুন। এফিডেভিটে আবেদনকারীর তথ্য, মায়ের নাম, এবং সংশোধনের বিষয় উল্লেখ থাকবে। এরপর জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় এফিডেভিটের রেজিস্ট্রেশন নম্বরসহ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করুন।
  • ফি জমা ও মিটিংয়ে অংশগ্রহণ: আবেদন ফর্ম জমা দেওয়ার পর সোনালী সেবা থেকে পিডিএফ প্রিন্ট করে নির্ধারিত ফি (প্রতি পরীক্ষা প্রায় ৫০০ টাকা) ব্যাংকে জমা দিন। এসএমএসে জানানো মিটিংয়ের তারিখে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে উপস্থিত থাকুন।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের তালিকা

কাগজপত্রবিস্তারিত
জন্ম সনদআবেদনকারীর জন্ম সনদ, যেখানে মায়ের সঠিক নাম উল্লেখিত।
মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্রমায়ের সঠিক নাম ও তথ্য যাচাইয়ের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্রের স্ক্যান কপি।
মাদ্রাসা প্রধানের প্রত্যয়নপত্রমাদ্রাসা প্রধানের সত্যায়নপত্র, যা সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা নিশ্চিত করে।
এফিডেভিটমায়ের নাম সংশোধনের জন্য আইনজীবীর মাধ্যমে সম্পাদিত হলফনামা।
পত্রিকার বিজ্ঞপ্তিজাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি, এফিডেভিটের রেজিস্ট্রেশন নম্বরসহ।
ফি জমার রশিদনির্ধারিত ফি জমার ব্যাংক রশিদের কপি (প্রতি পরীক্ষা প্রায় ৫০০ টাকা)।

মাদ্রাসা প্রধানের সহায়তা

আবেদন শুরুর আগে মাদ্রাসা প্রধানের সাথে যোগাযোগ করুন, কারণ তাদের প্রত্যয়নপত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

স্ট্যাটাস চেক

আবেদন জমা দেওয়ার পর মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে লগ-ইন করে নিয়মিত স্ট্যাটাস পরীক্ষা করুন।

কাগজপত্রের গুণগত মান

স্ক্যান করা কাগজপত্র পরিষ্কার ও স্পষ্ট হতে হবে, অন্যথায় আবেদন প্রক্রিয়া বিলম্বিত হতে পারে।
এই নির্দেশিকা অনুসরণ করে আপনি সহজেই মাদ্রাসার সার্টিফিকেটে মায়ের নাম সংশোধন করতে পারবেন।

মাদ্রাসার সার্টিফিকেটে মায়ের নাম সংশোধনের জন্য কোন কাগজপত্র প্রয়োজন?

আবেদনকারীর জন্ম সনদ, মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্র, মাদ্রাসা প্রধানের প্রত্যয়নপত্র, এফিডেভিট, জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি, এবং ফি জমার রশিদ জমা দিতে হবে।

মায়ের নাম সংশোধনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে কত সময় লাগে?

সামান্য বানান ভুলের ক্ষেত্রে ৩-৪ মাস লাগতে পারে। তবে নামের বড় পরিবর্তন বা অতিরিক্ত যাচাইয়ের প্রয়োজন হলে ১ বছর বা তার বেশি সময় লাগতে পারে।

এফিডেভিট কী এবং কীভাবে সম্পাদন করতে হবে?

আবেদনকারীর বয়স ১৮ বছরের কম হলে পিতা বা অভিভাবকের দ্বারা এফিডেভিট করতে হবে। প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট বা নোটারি পাবলিকের কাছে গিয়ে আবেদনকারীর নাম, মায়ের নাম, পরীক্ষার বিবরণ, এবং সংশোধনের বিষয় উল্লেখ করে এফিডেভিট তৈরি করতে হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top