সার্টিফিকেট সংশোধন করার নিয়ম – ঢাকা বোর্ড ২০২৫
পরিচিতি
এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার সার্টিফিকেট শিক্ষার্থীদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দলিল। কিন্তু কখনো কখনো নাম, জন্মতারিখ, পিতামাতার নাম কিংবা অন্যান্য তথ্য ভুল থাকতে পারে। এসব ভুল সংশোধনের জন্য ঢাকা শিক্ষা বোর্ড নির্দিষ্ট নিয়মে সংশোধনের সুযোগ প্রদান করে থাকে। এই গাইডে আপনি জানতে পারবেন কিভাবে সহজে ও সঠিকভাবে ঢাকা বোর্ডে সার্টিফিকেট সংশোধনের আবেদন করতে হয়।
সার্টিফিকেট সংশোধন করা যায় যেসব ক্ষেত্রে
- নামের বানানে ভুল (নিজের বা পিতামাতার)
- জন্মতারিখে ভুল
- রেজাল্ট বা গ্রেডে সংশোধনের প্রয়োজন
- লিঙ্গ (Gender) তথ্য ভুল
- ছবির সমস্যা বা অমিল
- এনআইডি বা জন্মসনদ অনুযায়ী তথ্য ঠিক করতে হয়
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
সার্টিফিকেট সংশোধনের আবেদন করতে নিচের কাগজপত্র প্রয়োজন:
- বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কর্তৃক সুপারিশপত্র
- ভুল এবং সঠিক তথ্য সম্বলিত জন্মনিবন্ধন বা জাতীয় পরিচয়পত্র
- মূল সার্টিফিকেট ও নম্বরপত্রের ফটোকপি
- নির্ধারিত ফি পরিশোধের রশিদ (চালান কপি)
- পাসপোর্ট সাইজ ছবি (২ কপি)
- প্রয়োজনে নোটারী পাবলিক দ্বারা সত্যায়িত অ্যাফিডেভিট
সংশোধনের ধাপসমূহ
ঢাকা বোর্ডে সার্টিফিকেট সংশোধনের ধাপ:
ধাপ | কার্যক্রম |
---|---|
১ | সংশোধন ফর্ম সংগ্রহ ও পূরণ করুন |
২ | স্কুল/কলেজ থেকে সুপারিশ নিন |
৩ | সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র সংযুক্ত করুন |
৪ | নির্ধারিত ফি পরিশোধ করুন |
৫ | বোর্ড অফিসে আবেদনপত্র জমা দিন |
৬ | সংশোধনের আপডেট ফলোআপ করুন |
সময়সীমা ও ফি
সাধারণত নাম বা জন্মতারিখ সংশোধনে ৩০-৪৫ কার্যদিবস সময় লাগে।
ফি নির্ভর করে সংশোধনের ধরন অনুযায়ী, সাধারণত ৫০০-২০০০ টাকার মধ্যে হয়।
গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা
- তথ্য যাচাই না করে আবেদন করবেন না
- ভুয়া তথ্য প্রদান আইনত দণ্ডনীয়
- সব ডকুমেন্ট সত্যায়িত হতে হবে
- সংশোধনের পর প্রাপ্ত সার্টিফিকেটই চূড়ান্ত হবে
ওয়েবসাইট লিংক
ঢাকা বোর্ড অফিসিয়াল ওয়েবসাইট
https://dhakaeducationboard.gov.bd/
অনলাইনে জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি সার্টিফিকেট সংশোধন প্রক্রিয়া
ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় এখন জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি এবং সমমানের সার্টিফিকেট সংশোধনের আবেদন অনলাইনেই করা যায়। এই প্রক্রিয়া দ্রুত, সুবিধাজনক এবং স্বচ্ছ। নিচে যশোর শিক্ষা বোর্ডের উদাহরণসহ সার্টিফিকেট সংশোধনের ধাপগুলো বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হলো।
ধাপ ১: শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রবেশ
সার্টিফিকেট সংশোধনের জন্য প্রথমে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। প্রতিটি বোর্ডের ওয়েবসাইটে “Online Application” নামে একটি লিংক থাকে, যেখান থেকে সংশোধনের আবেদন শুরু করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, যশোর শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলে বাম পাশে “Name & Age Correction” নামে একটি অপশন পাওয়া যায়। এই লিংকে ক্লিক করলে আবেদন ফর্মের পেজে নিয়ে যাওয়া হবে।
ধাপ ২: প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান
আবেদন ফর্মে নিম্নলিখিত তথ্যগুলো সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে:
- পরীক্ষার ধরন: জেএসসি, এসএসসি, বা এইচএসসি।
- পাসের সন: যে বছরে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।
- রোল নম্বর: পরীক্ষার রোল নম্বর।
- রেজিস্ট্রেশন নম্বর: পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন নম্বর।
- কেন্দ্রের নাম ও কোড নম্বর: পরীক্ষার কেন্দ্রের বিস্তারিত তথ্য।
- ব্যক্তিগত তথ্য: মোবাইল নম্বর, স্থায়ী ঠিকানা, এবং বর্তমান ঠিকানা।
সব তথ্য সঠিকভাবে প্রদানের পর “Find” বা “Search” অপশনে ক্লিক করলে আপনার সনদ অনুযায়ী তথ্য প্রদর্শিত হবে।
ধাপ ৩: সংশোধনের ধরন নির্বাচন
ফর্মের নিচের অংশে আপনি কী ধরনের সংশোধন করতে চান, তা নির্বাচন করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ:
- নাম সংশোধন: “Name Correction” অপশনে টিক দিয়ে নামের ঘর খুলতে হবে।
- জন্মতারিখ সংশোধন: “Date of Birth Correction” অপশনে ক্লিক করতে হবে।
- অভিভাবকের নাম সংশোধন: পিতা/মাতার নাম সংশোধনের জন্য নির্দিষ্ট অপশন নির্বাচন করতে হবে।
প্রতিটি সংশোধনের কারণ একটি বক্সে লিখতে হবে, যেখানে আপনি কেন এই পরিবর্তন চান তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করবেন।
ধাপ ৪: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপলোড
সংশোধনের জন্য নিম্নলিখিত কাগজপত্রের স্ক্যান কপি আপলোড করতে হবে:
- জন্ম সনদ।
- প্রাইমারি স্কুল পাসের সনদ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।
- প্রতিষ্ঠান প্রধানের প্রত্যয়নপত্র।
- জাতীয় পরিচয়পত্র (নিজের/পিতা/মাতার, যেটি প্রয়োজন)।
- এফিডেভিট (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।
- বয়স প্রমাণের মেডিকেল সনদ (জন্মতারিখ সংশোধনের ক্ষেত্রে)।
- গ্রামের ক্ষেত্রে ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের বা শহরের ক্ষেত্রে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের প্রত্যয়নপত্র।
প্রতিটি অপশনের পাশে “Browse” বাটন থাকবে, যেখান থেকে ফাইল নির্বাচন করে আপলোড করতে হবে।
ধাপ ৫: এফিডেভিট ও পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি
- এফিডেভিট: নাম বা জন্মতারিখ সংশোধনের জন্য প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট বা নোটারি পাবলিকের কাছে এফিডেভিট সম্পাদন করতে হবে। এফিডেভিটে নিম্নলিখিত তথ্য উল্লেখ করতে হবে:
- আবেদনকারীর নাম, পিতার নাম, মায়ের নাম।
- পরীক্ষার শাখা, সাল, কেন্দ্রের নাম, রোল নম্বর, বোর্ডের নাম।
- সংশোধনের বিষয় (নাম, জন্মতারিখ, বা অভিভাবকের নাম)।
- আবেদনকারীর বয়স ১৮ বছরের বেশি হলে নিজে এফিডেভিট করতে পারবেন। ১৮ বছরের কম হলে বা অভিভাবকের নাম সংশোধনের ক্ষেত্রে পিতার দ্বারা এফিডেভিট করতে হবে।
- পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি: এফিডেভিট সম্পাদনের পর একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে। বিজ্ঞপ্তিতে এফিডেভিটের তথ্য এবং নোটারি পাবলিকের রেজিস্ট্রেশন নম্বর উল্লেখ করতে হবে।
ধাপ ৬: আবেদন জমা ও ফি প্রদান
- আবেদন ফর্ম পূরণ ও কাগজপত্র আপলোডের পর “Submit” বাটনে ক্লিক করে আবেদন জমা দিতে হবে।
- সোনালী সেবার মাধ্যমে পিডিএফ ফাইল প্রিন্ট করে সরকারি ফি ব্যাংকে জমা দিতে হবে।
- ফি জমার পর এসএমএসের মাধ্যমে সভার তারিখ জানানো হবে। সভায় উপস্থিত থাকতে হবে।
ধাপ ৭: স্ট্যাটাস চেক ও অনুমোদন
- ওয়েবসাইটে লগ-ইন করে আবেদনের সর্বশেষ স্ট্যাটাস চেক করা যায়।
- অনুমোদন পেলে ফাইল প্রিন্ট করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দিতে হবে।
- ওয়েবসাইটে “Password Change”, “Application Edit”, এবং “Guidelines” অপশন থেকে আবেদন সম্পাদনা বা নির্দেশিকা দেখা যায়।
সময়সীমা
- সামান্য পরিবর্তন: নামের ছোটখাটো ভুল সংশোধনের ক্ষেত্রে ৩-৪ মাস সময় লাগতে পারে।
- বড় পরিবর্তন বা জন্মতারিখ: জন্মতারিখ বা অভিভাবকের নাম সংশোধনের ক্ষেত্রে ১ বছরের বেশি সময় লাগতে পারে। এই ক্ষেত্রে সিভিল সার্জনের প্রত্যয়নপত্র বা মেডিকেল সনদ প্রয়োজন হয়।
বিশেষ নির্দেশনা
- সঠিক এবং সম্পূর্ণ কাগজপত্র জমা দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
- এফিডেভিট ও পত্রিকার বিজ্ঞপ্তি ছাড়া আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না।
- সংশোধনের ধরন অনুযায়ী সঠিক কাগজপত্র নির্বাচন করুন।
- নিয়মিত স্ট্যাটাস চেক করে আবেদনের অগ্রগতি জানুন।
এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আপনি সহজেই জেএসসি, এসএসসি, বা এইচএসসি সার্টিফিকেট সংশোধনের আবেদন করতে পারবেন। আরও তথ্যের জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে নির্দেশিকা দেখুন।